মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি না টেনে সম্পূর্ণটাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই আর্টিকেলে আপনারা আরও জানতে পারবেন মাশরুম চাষে আয় ব্যয় সম্পর্কে।
মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন


মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। যা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকার পেয়ে থাকি। তাই এই সবজি আমরা যদি সঠিকভাবে চাষ করে থাকি তাহলে অনেক ভালো ফলাফল পাব। অনেকেই আছে মাশরুম চাষ করতে চাই । মাশরুমের চাষ পদ্ধতি জেনে সঠিক নিয়মে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

ভূমিকা

পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম মাশরুম রয়েছে। এর মধ্যে মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন এ বিষয়ে বিস্তারিত এ আর্টিকেলে আপনারা পাবেন। তাছাড়াও ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি ও আর্টিকেলে লেখা হয়েছে। সে সম্পর্কেও আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন। অনেকেই মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া ছাড়াও আমরা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার পায়। তাই আমরা যদি বেশি বেশি মাশরুম চাষ করি তাহলে নিজেরাও স্বাবলম্বী হব এবং পরিবারকেও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারব। মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন বিষয়ে ভালোভাবে পড়ে আপনারা চাষ করতে পারেন।

মাশরুম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মাশরুম চাষ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হচ্ছে। এটি একটি পেশা ও ব্যবসা হিসেবেও দেখা সম্ভব। কারণ মাশরুম চাষ করে বেশ ভালো উপার্জন করা যায়। এতে পুজি কম লাগে এবং আবাদি জমির বেশি প্রয়োজন হয় না। এটি একটি লাভজনক পেশা হিসেবেও পরিগণিত হয়। তাই মাশরুম চাষের ট্রেনিং নিয়ে যদি এই পেশা কেউ ব্যবসা হিসেবেও নিতে পারে তাহলে ভালো একটি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। 

মাশরুম চাষ করে এই প্যাকেটটা জমিতে জৈব সার হিসেবে ও দেয়া যায় এবং বিক্রিও করা যায়। মাশরুম চাষ করে অনেকেই যাদের কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে তারা একটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে পারে। অনেকের কর্ম থাকে না সে ক্ষেত্রে এটি একটি কর্মস্থল হিসেবে সৃষ্টি করতে পারে। মাশরুম চাষে পরিশ্রম কম হয় এবং খরচও কম হয়। 

উৎপাদন বেশি এটি এখন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশেই চাষ করে থাকে এবং সবজি হিসেবেও খাদ্যের হিসেবেও খেয়ে থাকে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ার কারণে জায়গা জমি কমে যাচ্ছে। কারণ জনসংখ্যার কারণে এখানে বাসস্থান করার জন্য জায়গা জমি কমে যাচ্ছে। তাই মাশরুমকে মূল্যবান সবজি হিসেবে চাষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে সবজির চাহিদা মিটবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।
মাশরুম চাষে সাধারণ সুবিধা সমূহ
মাশরুম চাষের সুবিধা রয়েছে সেগুলো নিচে দেয়া হলো
  • মাশরুম চাষের জন্য জমির কোন প্রয়োজন হয় না।
  • মাশরুম চাষ জমি ছাড়া ঘরের মধ্যেই করা সম্ভব।
  • মাশরুম চাষ করার জন্য অধিক শিক্ষিত বা অতি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না বাড়িত যে কেউ খুব সহজেই চাষ করতে পারে।
  • অল্প সময়েই মাশরুম পাওয়া যায় অর্থাৎ মাত্র৭-১০ দিনের মধ্যেই মাত্র পাওয়া যায়।
  • তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরের মতো করে ব্যবহার করা হয়।
  • অল্প পুজিতেই মাশরুম চাষ করা সম্ভব।
  • অল্প পুজিতে বেশি আয় করা যায়।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশ

ঘরে বসে মাশরুম চাষ করা যায়। বাংলাদেশের যে মাশরুম গুলা চাষ করা হয় অন্যান্য দেশে অন্য জাতের মাশরুম চাষ করা হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় খুব সহজে ঘরে ফলানোর জন্য ওয়েস্টার,
প্যাডি স্ট্র মিল্কি জাতীয় মাশরুম । আসুন তাহলে জেনে নিন মাশরুম চাষ পদ্ধতি

মাশরুমের জাত

মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে তার মধ্যে ৮-১০ পোকার জাতের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে চাষ উপযোগী মাশরুমের জাতগুলো হল
  • ঝিনুক মাশরুম - oyster mushroom
  • বোতাম মাশরুম - Button mushroom
  • কান মাশরুম - Wood ear mushroom
  • দুধ মাশরুম - Milky mushroom
  • তাপসহনি বোতাম মাশরুম - Heat tolerate button mushroom
  • খড় মাশরুম - Paddy straw mushroom
  • শীতাকে মাশরুম - Shitake mushroom

ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি

ঝিনুক মাশরুম চাষ করার জন্য বেশি উপকরণ প্রয়োজন হয় না। তিনটা উপকরণই যথেষ্ট। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ঝিনুক মাশরুমে চাষ বেশি হয়ে থাকে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ব্যাগের ভিতরে উৎপাদন করা হয় এই মাশরুম।
উপকরণ
  • কাঠের গুড়া ৬৪%
  • গমের ভুসি ৩২%
  • ধানের তুষ ৪%
  • মাশরুমের বীজ
  • পলিথিনের ব্যাগ।
সব জায়গাতে মাশরুমের বীজ কিনতে পাওয়া যায় না। তাই অনলাইন শপিং সাইডে বা যে সব জায়গাতে মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো থেকেই মাশরুমের বীজ পাওয়া যাবে। সেখান থেকে মাশরুমের বীজ কিনে নিতে হবে এবং বাকি উপকরণগুলো যোগাড় করে নিতে হবে সেখান থেকে।
পদ্ধতি
মাশরুম চাষের জন্য প্রথমে খড় গুলোকে কেটে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ফুটন্ত গরম পানি অথবা ব্লিচিং পাউডার বা চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে খড়গুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে ২১-২৪ ঘন্টা। এরপর খড়গুলো থেকে পানি এমন ভাবে ঝরিয়ে নিতে হবে যেন চাপলে পানির না ঝরে কিন্তু হাত ভেজা থাকে। এরপর একটি পলিথিনের মধ্যে ২ ইঞ্চি পুরো করে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। 

এর উপরে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ এইভাবে আটটি স্তর করে দিতে হবে।এবার পলিব্যাগের মুখ ভালো করে কোষে বন্ধ করে দিতে হবে। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে এমন করে চেপে চেপে দিতে হবে যেন ভিতরে বাতাস জমে না থাকে।এবার প্যাকেটে ১০-১২টা ছিদ্র করে দিতে হবে। 
মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

ছিদ্রগুলো ছোট ছোট হবে যাতে তুলো ঢুকিয়ে দিলে মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাতে ধুলাবালি না ঢুকতে পারে। প্যাকেটটি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোন অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে খেয়াল রাখতে হবে সেই জায়গায় যেন বাতাস চলাফেরা করে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্যাকেটের বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা যায় যাকে মাইসেলিয়াম বলে। 

মাইসেলিয়াম দেখা দিলেই তুলোর সরিয়ে দিয়ে আরো কিছু ছিদ্র করে দিতে হবে এবং আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে রোদ্রে রাখা যাবে না। এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সেখানে রৌদ্র না হয় বাতাসের আদ্রতা বুঝে রাখতে হবে। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে প্রায় তিনবার মাশরুম ফলন করা যায়।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
মাশরুমে মাছের উপক্রম দেখা দেয় বেশি। এটি মাশরুমের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও সবুজ বাদামি বা নীলমল দেখা দেয় যা ফামালিডিহাইডেরর তুলা ভিজে ঘষে দিলে দূর হয়ে যায়।

মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

দুধ মাশরুম তুলনামূলক আকারে বেশ বড় হয়। এটি প্রধানত বর্ষাকালে নারকেল গাছের গোড়ায় জন্মায়। এই মাশরুম ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও 85 থেকে 95 ভাগ আদ্রতায় চাষের জন্য উপযোগী।
উপকরণ
  • মাশরুমের বীজ ২০০ গ্রাম।
  • ধান বা গমের খড়।
  • কাঠ বা বাঁশের মাচা।
  • জীবাণুনাশ।
  • কম্পোস্ট সার।
  • স্প্রেয়ার।
  • পলিথিন এর ক্যারি ব্যাগ।
চাষ পদ্ধতি
  • আমন ধানের খড় কয়েক দিন রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • এবার খড়ড় দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার করে কেটে চটের ব্যাগে ভরে 12 ঘন্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • খড়গুলোকে ব্যাগ থেকে বের করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে আবার গরম পানিতে ভিজিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
  • পলিথিনের ব্যাগে খড় দিতে হবে তিন থেকে চার কেজি খড়ে 200 গ্রাম করে মাশরুম বীজ দিতে হবে।
  • পলিথিনের ব্যাগে খড় ও বীজকে চার থেকে পাঁচটি স্তরে সাজিয়ে নিতে হবে।
  • এবার ব্যাগের মুখ থেকে এমন ভাবে বাঁধতে হবে যাতে বাতাস অল্প পরিমানে চলাফেরা করতে পারে।
  • ১২ থেকে ১৮ দিন পর যখন বেডের খড় ছত্রাকের মতো হয়ে যায় তখন কম্পোস্ট ছাড় পলিব্যাগ এর উপরের ভাগে দিতে হবে।
  • স্প্রেয়ারের মা সাহায্যে খুব অল্প পরিমাণ পানি দিতে হবে পলিথিন দিয়ে চাপা দিতে হবে। ৩০ -৪০ দিনের মধ্যেই কুড়ি বের হয়ে যাবে।
  • প্রয়োজনে দুই একবার দিনে বেডে অল্প করে পানি স্প্রে করতে হবে।
  • ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই বেড থেকে মাশরুম তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়।
  • প্রতি বেড থেকে দুই থেকে তিনবার মাশরুম তোলা যায়।

মাশরুম চাষে আয় ব্যয়

মাশরুম চাষ যে কোন বয়সের মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। একজন ছাত্র তার বাড়ির ছাদে বা উঠানে ঘরের ভেতরে ও মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। শুধু নিজে নয় পরিবারকেও স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে পারে।মাশরুম চাষে খুব একটা বেশি পুঁজি লাগে না এবং পরিশ্রম বেশি করতে হয় না।মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন বিষয়ে ভালোভাবে পড়ে আপনারা চাষ করতে পারেন।

একজন ছাত্র ছাদে যখন মাশরুম তৈরি করে তখন অন্তত 10000 টাকা নিয়ে শুরু করলেই সে মাসে ভালো ইনকাম নিয়ে আসতে পারে। অনেকেই আছে স্কুল বন্ধ থাকায় বেকার বসে থাকে তখন তারা মাশরুম চাষটাকেও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। অনেকের দেখা যায় জায়গা থাকে না বাড়ির আশেপাশে তারা ছাদেও মাশরুম চাষ করতে পারে। 

মাশরুম চাষ করে সেই মাশরুম সহজেই বিক্রি করা সম্ভব এখন বড় বড় রেস্টুরেন্টে বাসাতেও মাশরুম ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন রকম খাবার তৈরিতে মাশরুম ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকেই অনলাইনেও বিক্রি করে থাকে। আবার অনেকেই দেখা যায় মাস্টার্স পাশ করে বেকার চাকরির পিছে ঘুরেও চাকরি হয় না। 

তারা বসে না থেকে মাশরুম ব্যবসাটাকে করতে পারে। চাকরি পেলে চাকরি পাশাপাশিও কিন্তু মাশরুম ব্যবসা করা যায়। তাই আপনারা ঘরে বসে না থেকে মাশরুমের ব্যবসা করতে পারেন এতে খাদ্য পুষ্টির অভাব দূর হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।

লেখকের মন্তব্য - মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন যে মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন, ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি, মাশরুমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, মাশরুমের আয় ও ব্যয়। আলোচনা থেকে অবশ্যই আপনারা বুঝতে পেরেছেন মাশরুম চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। এবং পড়ালেখার পাশাপাশি বা চাকরির পাশাপাশি আপনারা মাশরুম চাষ করতে পারেন। মাশরুম সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি সবজি। এবং এটি চাষ করার জন্য বেশি জায়গা জমিরও প্রয়োজন হয় না বাড়ির ছাদে বা আঙ্গিনাতে বা ঘরেই আপনারা খুব সহজেই মাশরুম চাষ করতে পারবেন।

আশা করি আমারে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের বন্ধু বান্ধব আত্মস্বজন এবং অন্যান্যদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। তাদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দেন। আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন অন্যান্য বিষয়ে জানার জন্য।এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url