মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে সে সম্পর্কে জানতে চান? এই আর্টিকেলে কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে এ বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণটা মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাহলে জানতে পারবেন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কোরবানি করা যাবে।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে

ঈদুল আযহা মুসলমানদের বড় উৎসবের দিন। এই দিনে মুসলমানের ঘরে ঘরে কোরবানি হয়ে থাকে। সরমর্থবান মুসলমানরা কোরবানি করে থাকে।কোরবানির জন্য পশু বাছাই করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ভূমিকা

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে এ সম্পর্কে আর্টিকেলে শুধু লেখা হয়নি। কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে, যাদের কোরবানি কবুল হবে না সে ক্ষেত্রেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এছাড়াও কোরবানির পশুর দুটি থাকলে কোরবানি হবে না সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়লে অবশ্যই জানতে পারবেন কোরবানির পশু যে শব্দটি থাকলে কোরবানি হবে না সেগুলো দেখে কোরবানির পশু কিনতে হবে।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে

কোরবানি ইসলামের মৌলিক ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সমর্থ্যবান মহিলা ও পুরুষের উপরে কোরবানি করা ওয়াজ। কোরবানি আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য একটি ইবাদত। কোরবানি ইবাদত করার জন্য অবশ্যই সংযম ও তাকওয়া থাকতে হবে। এজন্য কোরবানিতে এমন কিছু নিয়মকানুন আছে যা কিছু বৈধ এবং নিষিদ্ধ। সেগুলো মেনে কোরবানি করতে হবে।
 
কোরবানি করার জন্য নির্ধারিত কিছু পশু রয়েছে যেগুলো খাওয়া হালাল কিন্তু হালাল হলেও অনেক পশু দিয়ে কোরবানি হয় না। সেগুলো জেনে পরশু বাছাই করতে হবে। যেমন উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ আছে। এই ধরনের পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে এ পশুগুলোকে কোরআন শরীফের ভাষায় বলা হয়‘(বাহিমাতুল আনআম অর্থাৎ অহিংস্র চতুষ্পদ গৃহপালিত পশু )।’

অন্যান্য পশু যেগুলো গৃহপালিত নয় যেমন বন্য গরু, হরিণ ইত্যাদির দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।আবার হাঁস-মুরগি যেকোনো পাখি বগ যেগুলো খাওয়া জায়েজ সেগুলো দাড়াও কোরবানি করা জায়েজ নয়।যে পরশু কোরবানি করা হবে তার ওপর যে কোরবানি করবে তার মালিকানা থাকতে হবে। টাকা ধার করে কেনা পশু বা পথে কুড়িয়ে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি হবে না।

কুরবানীর পশুর বয়স কত হতে হবে

আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানির সমর্থ্যবান মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন। কোন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলিম নর নারীর কাছে ১০ই জিলহজ থেকে ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করা ওয়াজিব। সমর্থ্য থাকার পরেও যে ব্যাক্তি কোরবানি করে না তার জন্য অনেক গুনাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যার কোরবানী করার সমর্থ্য আছে তার পরেও সে কোরবানি করে না সে যেন ঈদগাহে না আসে।( সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস:৩১২৩)
  • কোরবানির পশু হতে হবে নিখুঁত। ছয় ধরনের পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। যেমন গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া। কোরবানির পশু শুধু নিখুঁত হলেও হবে না তাদের বয়স নির্ধারিত হতে হবে। কোরবানির জন্য একটা বয়স লাগে।কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে এবংমহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে সে সম্পর্কেও জেনে নিন।
  • কোরবানির জন্য উটের বয়স হতে হবে পাঁচ বছর। গরু ও মহিষের জন্য পাঁচ বছর হতে হবে না সে ক্ষেত্রে দুই বছর বয়স হলেই হবে।
  • ছাগল ও ভেড়ার জন্য বয়স হতে হবে এক বছর।
  • ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কমও হয় কিন্তু দেখতে পুষ্ট এবং অনেক বড়সড় লাগে তবে সে পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রে ভেড়া ও দুম্বার বয়স ছয় মাসের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে।
  • আর ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোন অবস্থাতেই ওই ছাগলকে কোরবানি করা যাবে না। ছাগলের বয়স অবশ্যই এক বছর হতে হবে।

কোরবানির পশুতে যেসব ত্রুটি থাকা যাবে না

কোরবানির পশু উট, গরু ,মহিষ, ভেড়া, ছাগল ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ আছে কিন্তু এসব পশু দ্বারা অনেক সময় কোরবানি করা যাবে না। কোরবানি পশু হতে হবে দোষ ত্রুটি মুক্ত। তবে সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। তাহলে আসুন আমরা জেনে নিই কোরবানির পশুতে যে ত্রুটি থাকলে কোরবানি করা যাবে না।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে

  • যে পশুর একটি পা মাটিতে রাখতে পারে না এমন পশু যা তিনটি পা দিয়ে চলাফেরা করে। খুড়িয়ে হাঁটাচলা করে।এরকম পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পশুর শিং ভেঙ্গে গেছে এমনভাবে ভেঙেছে যে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিং একেবারে গোড়া থেকেই ভেঙ্গে গিয়েছে সে রকম পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পশুর লেজ কেটে গেছে। সে পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পশুর কান কাটা বা কান অর্ধেক কেটে গেছে সেরকম পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • যে পরশু চোখে দেখতে পারেনা স্পষ্ট বোঝা যায় সে পশুর দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ নয়।
  • যে পশু অতি রোগাক্রান্ত দুর্বল হাঁটাচলা করতে পারে না দাঁত পড়ে গেছে খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারে না সেরকম পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।
  • গাভীন পশু যদি তার পেটে বাচ্চা থাকে জীবিত তবে সেই ওষুধারা কোরবানি করা জায়েজ নয় ।

যাদের কোরবানি কবুল হবে না

ঈদুল আযহা মুসলমানদের একটি বড় উৎসব। ঈদুল আযহা প্রায় মুসলমান বিভিন্ন রকম হালাল পশু কোরবানি করে থাকেন। যে পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। অনেকেই আছে যে কোরবানি দেয় কিন্তু জানে না যে কি কারনে কোরবানি আদায় হবে না। কোনরকম সন্দেহ সংশয় কোরবানিতে থাকা যাবে না। কোরবানি দেয়া সত্ত্বেও কোরবানি আদায় হয় না তাই সে বিষয়গুলো আমরা জেনে নি।
কোরবানির পশু প্রদর্শনী করলে
শুধু কোরবানি করলেই হবে না সঠিকভাবে কোরবানি করার নিয়ম জানতে হবে। লোক দেখানো কোরবানি করে নাম খ্যাতি অর্জন করায় কোরবানি নয়। অনেকেই মনে করে আমি বড় সুন্দর পশু কিনে এনে জবাই করব মানুষ দেখে আমার নাম করবে। এরকম হলে কোরবানি হবে না। কোরবানি প্রদর্শন করলে আল্লাহ তাআলা কাছে কবুল হবে না।

মানুষকে দেখে বড় সুন্দর অনেক দামি একটা পশু কিনে এনে কোরবানি করলে তাতে লোক দেখানোই হবে। তাই মানুষকে না দেখে নিজের পছন্দমত একটি নিজের সমর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনে কোরবানি করতে হবে।
কোরআন সুন্নাহর বিধানের লঙ্ঘন হলে
আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোরআন শরীফে কি বলেছেন এবং আল্লাহর ও রাসূলের বিধি-নিষেষ বিধি-বিধান অনুসারে কোরবানি দিতে হবে।অনেককে আছে যারা শুধু গোস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকে তাদের কোরবানি গ্রহণ হবে না। সুতরাং কোরবানি করার জন্য অবশ্যই কোরআন- সুন্নাহর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যেভাবে দিক নির্দেশনা করা হয়েছে সেভাবেই করতে হবে।
অবৈধ টাকায় কোরবানি করলে
হারাম হালাল বেছে কোরবানি করতে হবে। অর্থাৎ আপনার হারাম টাকা দিয়ে কখনোই কোরবানি জায়েজ হবে না। আল্লাহতালা মুসলিম একনিষ্ঠ নিয়ত কোরআন- সুন্নাহ বিধি-বিধান মেনে কুরবানী করার আদেশ করেছেন।হালাল সম্পদ থেকে ব্যয় করে পশু কোরবানি করা যায়।
নিয়তে ও ভাগ বন্টনের গরমিল হলে
কোরবানির পশু ভাগে দিলে প্রত্যেকের ভাগ সমান হতে হবে। কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে যেন কম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ উট, গরু, মহিষ, এ পশুগুলো দুই ভাগ, তিন ভাগ, বা ছয় সাত ভাগে কোরবানি করা জায়েজ আছে। তাই এগুলোর ভাগ করার সময় যেন কারো ভাগ না কম হয়।
কোরবানি করার সময় নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকা জরুরী। ভাগের কোরবানি দেয়ার সময় অবশ্যই শরিকদের খেয়াল রাখতে হবে যেন কোরবানির বিশুদ্ধ হয়।

কুরবানীর গরুর দাঁত

গরুর বয়স জানতে গেলে গরুর দাঁত দেখলেই বোঝা যাবে গরুর বয়স কত। গরুর দাঁতের সংখা এবং ক্ষয় পরিমাণ দেখে নির্ণয় করা যায় বয়স। মানুষের যেমন অস্থায়ী আর স্থায়ী দাঁত রয়েছে তেমন গরুর ও রয়েছে। গরুর যে দাঁতগুলো অস্থায়ী সেগুলো দেখতে অনেকটা সাদা এবং আকারে ছোট হয়ে থাকে। গরুর ৩২ টি দাঁত থাকে 6 টি কামড়ানোর দাঁত এবং নিচের চোয়ালের সামনের দিকে দুইটা ক্যানাইন নামক দাঁত থাকে। 

গরুর জন্মের পর থেকে প্রায় এক মাসের মধ্যেই অস্থায়ী দাঁত উঠতে শুরু করে দেয়। গরুর বয়স যখন ১ বছর হবে তখন সামনের মাঝে দুটি অস্থায়ী দাঁত পড়ে যায় এবং স্থায়ী দাঁত উঠতে শুরু করে সেগুলো আকারে বড় হয়। দুই বছর বয়সে এ দাঁতগুলো বেশ বড় আকার ধারণ করে। এভাবে দুই বছরে স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা হয় চারটি। তিন বছরের মাঝে পাশের আরো দুইটি দাঁত উঠে পড়ে স্থায়ী দাঁত হয়ে যায় ছয়টি। দুই বছরে এভাবেই দাঁতের সংখ্যা হিসাব করা যায়।

লেখকের শেষ মন্তব্য - মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কত ধরনের পশু কুরবানী করা যাবে

প্রিয় পাঠক আপনারা জানেন ঈদুল আযহা আমাদের মুসলমানদের জন্য উৎসবমুখর দেন। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করে থাকেন। আপনারা যারা পশু কোরবানি করতে চান সামনে কোরবানি ঈদে আসছে সেক্ষেত্রে আমারে আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে আর্টিকেলে আলোচনা করে এসেছি কোরবানির পশুর বয়স সম্পর্কে এবং কি রকম কোরবানি পশু কোরবানি করা জায়েজ।

আশা করি আমার আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। এবং আরো নতুন নতুন প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পড়ার জন্য এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url